বাংলা একাডেমি প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার পেলেন কমলগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি লেখক,সাংবাদিক ইসহাক কাজল

  • মুদ্রণ

২০১৩ সালে প্রবাসে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন যুক্তরাজ্যবাসী লেখক ও সাংবাদিক ইসহাক কাজল, সাহিত্য ও ইতিহাস গবেষক ফারুক আহমদ এবং জার্মানবাসী লেখক ও বিজ্ঞান-গবেষক ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর লন্ডনে বাংলা একাডেমির বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মেলা উপলক্ষে ২০১১ সাল থেকে বাংলা একাডেমি এই পুরস্কারের প্রবর্তন করে। বইমেলার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্য। “বাংলা একাডেমি বইমেলা ও সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব” নামে প্রতি বছর বাংলা একাডেমির উদ্যোগ এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের সহযোগিতায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গত ১৫ ও ১৬ জুন পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে দুইদিনব্যাপী বইমেলা ২০১৩ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধন করেন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। আলতাব আলী পার্কে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করে টাওয়ার হ্যামলেটস বারা নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।
 ২০ জুন বিকেলে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপল আইডিয়া স্টোরে অনুষ্ঠিত বইমেলার সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমি প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে ও কবি দিলু নাসেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহান একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি ও ঔপন্যাসিক কাদের মাহমুদ, সাপ্তাহিক জনমতের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, এনটিভি ইউরোপের সিইও সাবরিনা হোসেইন এবং কবি আতাউর রহমান মিলাদ।
 কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে ও উদীচী পারফর্মিং আর্টসের শিশু শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে সাংস্কৃতিক পরিষদের পক্ষে উদীচী পারফর্মিং আর্টসের শিশু শিল্পীরা। পরে তাদেরই পরিবেশনায় কবি মহাদেব সাহার শান্তি কবিতার অনুবাদ আবৃত্তি অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা সৃষ্টি করে।
 অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আব্দুল গাফফার চৌধুরী, বাংলা একাডেমির এই বইমেলা যাতে স্থায়ীভাবে চালু থাকে সে ব্যাপারে মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ইউরোপব্যাপী একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে একটি শক্ত ভিতের উপর মেলার ব্যবস্থাপনাকে দাঁড় করানোর উপর জোর দেন। সদ্যপ্রয়াত যুক্তরাষ্ট্রবাসী নিভৃতচারী লেখক খসরুজ্জামান চৌধুরীর সাহিত্য প্রতিভার প্রশংসা করে বলেন, তাকে মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রবাসে যারা লেখালেখি করেন তাদের একটি তালিকাও বাংলা একাডেমিতে থাকা প্রয়োজন। নতুবা তাদের নামদাম এবং অর্জনগুলো এক পর্যায়ে হারিয়ে যাবে।
 বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সামসুজ্জামান খান তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলা একাডেমি বর্হিবিশ্বে বা ইউরোপে যে কোনও একটি নির্দিষ্ট নামে বাংলা একাডেমি পুরস্কারটির নামকরণের চিন্তা-ভাবনা করছে, যাতে বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবাসী বাঙালি লেখকদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়। বাংলা একাডেমির নতুন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়াসহ একাডেমির পূর্নবিন্যাসের বর্ণনা দেন তিনি। প্রবাসে সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য একাডেমির পরিচালনা পর্ষদের প্রশংসা করে মহাপরিচালক এর গুরুত্ব এবং পরিধি নিয়েও বিশেষ ব্যাখ্যা দেন।
 বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন তার বক্তব্যে বলেন, মানুষ শিকড় ছাড়া বাঁচতে পারেন না। প্রবাস থেকে বাঙালিরা শিকড়ের টানে, প্রাণের তাগিদে সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা করছেন। তিনি বলেন, প্রবাসেও সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি শক্ত ভিত রচিত হোক, তা আমাদের সকলেরই কাম্য।
 সমাপনি অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির পুরস্কার ঘোষণার অপেক্ষায় উপস্থিত সকলেই ছিলেন উন্মুখ। কে কে পুরস্কার পচ্ছেন এ প্রশ্ন ছিল সকলের মুখে। নাম ঘোষণার আগে মহাপরিচালক এবারে দুটি পুরস্কারের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি যুক্তরাজ্যে দুইটি এবং ইউরোপে একটি মোট তিনটি পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে যুক্তরাজ্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে সাংবাদিক ইসহাক কাজল এবং সাহিত্য ও ইতিহাস গবেষক ফারুক আহমদের নাম ঘোষণা করতেই করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান কক্ষ। ইসহাক কাজল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন কবি দিলওয়ার ও প্রয়াত কবি মাহমুদ হককে এ সময় তার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে। সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকার মাধ্যমে প্রবাসে তার সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু হয়। নিজেকে বিকশিত করতে জনমতের অসামান্য অবদানের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানান।
 ফারুক আহমদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার লেখালেখির মূল বিষয় হচ্ছে বিলাতের বাঙালির সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস। সুতরাং এর অংশীদার যুক্তরাজ্যবাসী বাঙালিরা আমি এ পুরস্কারটি তাদেরকেই উৎসর্গ করছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি বাংলা একাডেমি এবং একই সাথে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের কর্মকর্তাদেরকেও।
 পরে ইসহাক কাজল, ফারুক আহমদ ও ড. মোহাম্মদ জাকারিয়ার পরিচিতি পড়ে শোনান যথাক্রমে ইকবাল হোসেন বুল বুল, মুজিবুল হক মনি ও দিলু নাসের।
 অনুষ্ঠানের সভাপতি সাংস্কৃতিককর্মী গোলাম মোস্তফার সমাপনি বক্তব্য শেষে উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখে আপ্যায়িত করা হয়। বিশিষ্ট কণ্ঠ শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী কবি দিলু নাসেরের বাংলা টাউনকে নিয়ে লেখা ব্রিকলেইন গান গেয়ে অনুষ্ঠানুনের সমাপ্তি টানেন। তার সাথে সাথে কন্ঠ মেলান অনুষ্ঠানের অতিথিসহ উপস্থিত সকলে।
 সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
 ইসহাক কাজল: লেখক ও সাংবাদিক ইসহাক কাজল ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণঊষার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ আমজাদ উল্লাহ ও মা সায়রা বিবি। তিনি পতনঊষার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজগাঁও সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়া বাজার কৃষ্ণচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় এবং মদনমোহন কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজ জীবন থেকেই সাংবাদিকতার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত। ১৯৬৯ সালে সিলেট শহরে গঠিত সাহিত্য সংগঠন সমস্বর লেখক ও শিল্পী সংস্থা`র যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সাল থেকে পেশাজীবী সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে সাপ্তাহিক সিলেট কণ্ঠ, নতুন কথা, রানার, জালালাবাদ, যুগভেরী, সিলেট সমাচার, খবর এবং দৈনিক জালালাবাদী পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধিসহ এবং দৈনিক খোলা চিঠি`র বার্তা-সম্পাদক, দৈনিক মৌলভীবাজার বার্তা`র নির্বাহী সম্পাদক এবং দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকার সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। ইসহাক কাজল ২০০০ সালে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যুক্তরাজ্যে এসে দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিলাতের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক জনমত-এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিয়ে বর্তমানে পলিটিক্যাল অ্যাডিট পদে উন্নীত হয়েছেন। একই সাথে লন্ডন থেকে প্রকাশিত তৈমাসিক সাহিত্য কাগজ তৃতীয় ধারা`র প্রধান সম্পাদক। ইসহাক কাজল বাংলাদেশে থাকাকালীন সিলেট প্রেস ক্লাবের কার্যকরি পরিষদের সদস্য (১৯৮৫-৮৬) এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, শ্রীমঙ্গল ইউনিটের সভাপতি (১৯৯৯-২০০১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার প্রকাশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ইতিহাস:
১. সুরমা উপত্যকার চা-শ্রমিক আন্দোলন: অতীত ও বর্তমান
 প্রকাশক: প্রবাস প্রকাশনী, লন্ডন; প্রকাশ কাল: ২০০৬ (দ্বিতীয় সংস্করণ: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশ কাল: ২০১০)।
প্রবন্ধ-নিবন্ধ:
২.সিলেটের শিল্পী সাধক সংগ্রামী
 প্রকাশক: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশ কাল: ২০১২।
 কলাম:
৩. বাঙালি ও বাংলাদেশ, প্রকাশক: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশ কাল:২০১০।
 ৪. জনক তুমি বাংলাদেশ, প্রকাশক: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশ কাল: ২০১০।
 সম্পাদনা:
৫. জননেতা গাউস খান স্মাকরগ্রন্থ, লন্ডন, প্রকাশকাল: ২০১০।
 ৬. মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-সংগ্রাম, প্রকাশক: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশ কাল:২০১২।
 ৬. স্মৃতিতে মাহমুদ হক, প্রকাশক: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশ কাল: ২০১৩।
 ইংরেজি প্রকাশনা:
History:
 7. Tea Workers’ Movement in the Surma Vally a History and Perspective, Ittadi Grantha Prokash, Dhaka, 2012.
সম্পাদিত সংকলন:
সিলেট ডাইজেস্ট (অনিয়মিত মাসিক); ৯. মুক্তি (একুশে সংকলন); ঐতিহ্য (কবিতা); বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ( শোক দিবস সংখ্যা); ঊন্মেষ (সাহিত্য) ও বিদ্রোহী বলাকা (সাহিত্য)।
স্থায় ঠিকানা: গ্রাম: ব্রাহ্মণঊষার, পোস্ট অফিস: পতনঊষার, উপজেলা: কমলঘঞ্জ, মৌলভীবাজার।
 বর্তমান ঠিকানা: 914 Green Lane, Dagenham, RM8 1BX, UK
 

সৌজন্যে: কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব

Share